পিরোজপুরের নাজিরপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় এইচবিবি প্রকল্পের ইটসলিং রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন কাজ পেতে প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের ১৫% অফিস সহায়ককে না দিলে কাজ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি নাজিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত অস্থায়ী ভিক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে এক ঠিকাদারের কথোপকথোনের এমনই একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। কথাগুলো কৌশলে অডিও রেকর্ড করেন ওই ঠিকাদার নিজেই। ১০ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ওই রেকর্ডটি এ প্রতিনিধির কাছে রয়েছে।
অডিওতে অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলীকে বলতে শোনা যায়- ‘রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন কাজ পেতে প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের ১৫% টাকা আমাকে দিলেই আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। আমার প্রয়োজন টাকা আর আপনার প্রয়োজন কাজের। কিভাবে আপনাকে কাজ পাইয়ে দিতে হবে সেটা আমার উপর ছেড়ে দিন। লটারী করবো আমরা, কীভাবে আপনাকে কাজ পাইয়ে দিবো সেটা বুঝবো আমি। তাছাড়া আপনি যে ১৫% টাকা দিবেন তার ৫% টাকা দিতে হবে জেলা অফিসে, ৫% টাকা ইউএনও, ৩% টাকা পিআইও এবং বাকী ২% টাকা পাবো আমি। এভাবেই সবাইকে ম্যানেজ করে কাজ করা হবে। এ নিয়ে আপনাকে কোনো টেনশন করতে হবে না, আপনার পছন্দ অনুযায়ী ২ নম্বর গ্রুপের কাজটিই আপনাকে দেওয়া হবে। তবে আসল কথা হলো- ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার লটারী হবে। এর আগেই হিসেব অনুযায়ী এক গ্রুপের জন্য আপনাকে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হবে। তাহলেই আপনি কাজ পাবেন। আগে টাকা পরে কাজ, তা না হলে কাজ পাওয়ার পর যদি আপনি পল্টি নেন।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তোফাজ্জেল হোসেন মুঠোফোনে সমকালকে জানান, তিনিসহ কার্য-সহকারী শাওন হালদার এ অফিসে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ষ্টাফ। তাছাড়া অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলী প্রজেক্টের মাধ্যমে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। কোনো প্রকার সরকারি নিয়োগ ছাড়াই পিআইও ইস্রাফিল তার এলাকার মনির নামের এক এ অফিসে রেখে অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলী ও মনিরকে দিয়েই অফিসের সকল কাজ করান। অফিসের একটি কক্ষে অফিসারের মতই বসে আলী। অফিসের সকল ফাইলপত্র তার নিয়ন্ত্রণে থাকে। পিআইও নিজে পর্দার আড়ালে থেকে অফিস সহায়ক আলীকে দিয়েই সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করে। পিআইও’র এ সকল কর্মকাণ্ড সর্মথন না করায় পিআইও তাকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, পিআইও এবং অফিস সহায়ক আলী লটারী কারসাজির মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ত্রাণের ব্রীজ ও কালভার্ট পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে পাইয়ে দিয়ে পরে নিজেরাই ওই কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। অর্থাৎ, নানা কৌশলে তারা নাজিরপুর উপজেলায় চাকরি করে নিজেরাই ঠিকাদারী করছেন। এছাড়া অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ত্রাণের ঘর দেওয়ার নামে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন থেকে ঘর প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকা আদায় করারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হলে পিআইও অফিসের অফিস সহায়ক মোহম্মদ আলী সমকালকে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আমার কাউকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ওই ঠিকাদারের সঙ্গে আমার যে কথাগুলো হয়েছে তা আমি রহস্য করে বলেছি। সে কথাগুলো তিনি রেকর্ড করে আমাকে বিপদে ফেলবেন তা আমি বুঝতে পারিনি। তাছাড়া আমি আমার অফিসের বসদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এখানে আমার কিছু করার সুযোগ নেই।’
সার্বিক বিষয় কথা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইস্রাফিল তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সমকালকে বলেন, ‘এগুলো ভিক্তিহীন অভিযোগ। এর কোন সত্যতা নেই। তাছাড়া অফিস সহায়ক আলীর বিরুদ্ধে ১৫% টাকা গ্রহণ করে ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার অডিওটি আমি শুনেছি এবং কথা গুলো আলীর বলে আমি সনাক্তও করেছি। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। সে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’