ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ খান।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ফরিদপুর ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মীর নাসির হোসেন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম মিয়াকে। পাশাপাশি কলেজের পরিচালক ডা. মো. মোসলেম উদ্দিন, সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জে সি সাহা ও অধ্যাপক ডা. মো. নাসিরউদ্দিন এবং কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শেখ ইউনুস আলীকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে কমিটি। তদন্ত করলে জানা যাবে ওই ছাত্রীর অভিযোগ কতটা সংগত কিংবা অসংগত।

গতকাল শনিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে  ‘৩ ডাক্তারের অপকর্ম ফাঁস করলেন মেডিকেল ছাত্রী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

রোববার দিনব্যাপী ফরিদপুর শহর ও ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সংবাদটি। ফোন করে অনেকেই প্রতিবেদকের মাধ্যমে  ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংবাদটি জনসম্মুখে আনার জন্য।

এদিকে, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ বের হয়ে আসে তাদের ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে। সারাদেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা  এবং ওই ছাত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ অবস্থায় যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা তিন চিকিৎসক রোববার সকাল থেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন নিজেদের বাঁচাতে। ছুটে যান বিভিন্ন উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার বিভিন্ন বর্ষের এমবিবিএস পরীক্ষা চলছিল। ওই পরীক্ষাগুলোতে ডিউটি করতে যান অভিযুক্ত তিন চিকিৎসকের একজন। ডিউটি চলাকালীন সময়ে তাকে চিন্তিত দেখা যায় এবং কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেননি তিনি। এমনকি অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক অফিস এবং চেম্বারেও বসেননি।

এর আগে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজের তিন শিক্ষকের নানা অপকর্ম নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন কলেজের সাবেক এক ছাত্রী। ওই স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত (DAMC:The Students United-G) ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন ওই ছাত্রী। শিক্ষকদের হাতে তার মতো আরও অনেক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে যৌন হয়রানির নানা তথ্য সংযুক্ত করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে ঢাকায় একটি হাসপাতালে কর্মরত।

মেডিকেল কলেজের এফ-৩ ব্যাচের ওই ছাত্রী একই প্রতিষ্ঠানের রেসিডেনসিয়াল ফিজিশিয়ান ডা. ঝিলাম জিয়া, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ ও এন্ডোক্রাইনোলজি ডায়াবেটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কে এম নাহিদুল হকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *