ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ভোলার শতাধিক ইটভাটা। এতে নষ্ট হয়েছে প্রায় এক কোটি কাঁচা ইট। সেই সঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি টাকার অধিক লোকসানের মুখে পড়েছেন ইটভাটার মালিকরা।
এদিকে ইটভাটা মালিকদের লোকসানের কারণে ভাটার কাজ বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলার ২০ লাখ মানুষের ইটের চাহিদার জন্য জেলায় ১২৫টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় প্রায় ৩০টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শুরু এবং মাঝামাঝি থেকে ইটভাটাগুলোতে কাজ শুরু হয়। সে অনুযায়ী এ বছরও অক্টোবরের শুরুতে কাজ শুরু হয়।
কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব ও ভারী বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে ইটভাটাগুলোর প্রায় এক কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়। বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয় ইটভাটার জ্বালানি কয়লা। এতে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন মালিকরা।
ভোলা সদর উপজেলার সাবাব ও মায়ের দোয়া ইটভাটার মালিক মো. আমির হোসেন বলেন, ব্যাংক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর দুটি ইটভাটার ইট তৈরির কাজ শুরু করি। এরই মধ্যে প্রায় ১০ লাখ কাঁচা ইট তৈরি করা হয়। ঠিক যখন কাঁচা ইট পোড়ানো শুরু হবে তখনই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। এতে সব ইট নষ্ট হয়ে যায়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি আমি।
খান ইটভাটার মালিক আব্দুল কালাম খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের সব ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আমার। এ অবস্থায় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
একতা ও ফ্রেন্ডস ইটভাটার মালিক এবং জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম কায়েদ বলেন, আমাদের ভাটা মালিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ নেই। পুরো জেলার সব ইটভাটা মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদি ব্যাংক বিনা সুদে আবার ভাটা মালিকদের ঋণ দেয় ও সরকারি আয়কর এবং আগের ঋণের সুদ মওকুফ করে তাহলে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। এজন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।
অন্যদিকে, ইটভাটা মালিকদের লোকসানের কারণে কাজ বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন ৩০ হাজার ইটভাটা শ্রমিক। আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
ইটভাটা শ্রমিক মো. ইসমাইল হোসেন ও সাহাদাতসহ একাধিক শ্রমিক জানান, বর্তমানে ইটভাটার কাজ বন্ধ। কাজ না থাকায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। এজন্য স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের যদি সরকার সহযোগিতা দেয় তাহলে দুবেলা দু’মুঠো খেতে পারব।