মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির আত্মীয়স্বজন যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগে। যোগ দিয়েছে দাগি আসামিরাও। মামলা থেকে রেহাই পেতে কিংবা পুলিশের ধরপাকড় থেকে বাঁচতে এই দলে নাম লিখিয়েছে তারা। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নেতাকর্মীদের তালিকা পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সমকাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এই দুই বিভাগসহ আট বিভাগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকাটি দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আট সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সমকালকে জানিয়েছেন, এ তালিকায় যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের নাম ও তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তালিকাটি জেলা নেতাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তারা তালিকায় থাকা বিতর্কিতদের দল থেকে বাদ দেবেন।

বেশ কয়েকজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, তালিকাটিতে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা আগে কোন দলের সঙ্গে জড়িত ছিল, সে সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্বের দলে তাদের সাংগঠনিক অবস্থান, তাদের দাদা, নানা, বাবা, চাচা, ফুফু, মামাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের রাজনৈতিক মতাদর্শ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। তাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার তথ্যও রয়েছে এ তালিকায়। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর ওই ব্যক্তির পদ-পদবি ও দলীয় কার্যক্রমে তার ভূমিকা সংক্রান্ত তথ্যও এতে যোগ করা হয়েছে। এতে তার মামলা সংক্রান্ত তথ্যাবলিও রয়েছে।

সিলেট বিভাগ :সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ইকবাল হোসেন তালুকদারের বাবা আফতাব উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে ছিলেন। এমন জনশ্রুতির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে এ তালিকায়। ইকবাল হোসেন তালুকদার উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি উপজেলা শাখার সহসভাপতি হয়েছেন।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মধু মিয়া ছিলেন ভাটেরা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর নেতা। তার চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি। সেই মধু মিয়া এখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার শফিকুল ইসলামও জামায়াত থেকে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা বনেছেন।

সিলেটের সমুজ আলী ও ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এই দুই ভাই মামলা হওয়ার পর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তালিকার মন্তব্যে বলা হয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাবুল মিয়া, আলী মর্তুজা, মৌলভীবাজারের বড়লেখার মোহাম্মদ আশরাফ, জুড়ীর শরীফুল ইসলাম টেনু, হবিগঞ্জের লাখাইয়ের নুরুজ্জামান মোল্লা, আজমিরীগঞ্জের আলাউদ্দিন মিয়া এবং মোশাহিদ মিয়া মামলার পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির নেতা ছিলেন তারা।

এদিকে, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রফিকুল ইসলাম মলাই যুবদল থেকে যোগ দেওয়ার পর ৩ নম্বর মুড়িয়াউক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। হবিগঞ্জের জামায়াত নেতা শাহেদ মিয়া আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দল ছেড়ে আসার পর অনেকে আওয়ামী লীগের নেতাও হয়েছেন। হবিগঞ্জের কামাল সরদার সদর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি, লাখাইয়ের নুরুজ্জামান মোল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের আলী মর্তুজা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের এটিএম জুয়েল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি, মৌলভীবাজারের বড়লেখার মোহাম্মদ আশরাফ উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, দক্ষিণ নন্দীপাড়ার শাহ আলম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের আতিকুর রহমান ৫ নম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি, মোহাম্মদ মুন্না বিআইডিসি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বাছিদুর রহমান বরমচাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, ফিরুজ মিয়া ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বদরুল ইসলাম নানু ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়াদুদ বক্স হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।

এদিকে, বিএনপি থেকে যোগ দিয়েছেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের আকরাম হোসেন, মাহবুবুল ইসলাম মিছলু, মামুন আহমদ, বিশ্বনাথের ইদ্রিস আলী, হবিগঞ্জ সদরের মাহমুদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, কয়ছর আহমদ শামীম, আবদুর নুর মাহির, ফরিদ আহমদ, আবু তালেব, আলাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন মুহুরী, আবদুস সামাদ, অনু মিয়া, সোনাই মেম্বার, মাধবপুরের হামদু মিয়া, সোহেল মিয়া, সাহেদ মিয়া, আবদুল গফুর প্রধান, আহাদ আলী, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার ফেরদৌসুর রহমান, মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, মোহাম্মদ মোকাব্বির, মোহাম্মদ একলাস, ময়না মিয়া, বাবুল মিয়া, তাহের মিয়া, আলাউদ্দিন শাহ, আলম মুন্সি, মহসীন আহমদ, আশরাফ আলী, আলেফর খান, আয়াত আলী, সোহরাব উদ্দিন, রাইস উদ্দিন, সাগর মিয়া, মোহাম্মদ মারুফ, নসর মাস্টার, সুজানগরের আবদুর রশীদ চৌধুরী, আরিফুজ্জামান চৌধুরী, মতিউর রহমান মতি ও শাহজাহান মিয়া।

ময়মনসিংহ বিভাগ :তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রোকনুজ্জামান রোকনের দাদা আবদুল গফুর মণ্ডল মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। উপজেলা বিএনপির এই নেতা এখন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। মাদারগঞ্জ শহর বিএনপির সহসভাপতির পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা আবদুর রাজ্জাক তরফদারের বাবা মোসলেম উদ্দিন স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন।

জামালপুরের মেলান্দহের মুজিবুর রহমান উপজেলা জামায়াতের সভাপতির পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন। সরিষাবাড়ীর সোহেল রানা ও মোহাম্মদ আলী বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে আসা মেলান্দহের আবু তাহের জেলা পরিষদ সদস্য হয়েছেন।

মামলার পর পুলিশি ধরপাকড় এড়াতে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন নেত্রকোনার পূর্বধলার আলতাফ হোসেন, আবুল কাশেম, আবদুল গফুর, আতাউর রহমান, মিরাশ উদ্দিন, তারা মিয়া, আতাউর রহমান এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জের নজরুল ইসলাম সওদাগর।

বিএনপি থেকে আসা জামালপুর সদরের মীর মোশারফ হোসেন মিঠু, সরিষাবাড়ীর রোকনুজ্জামান রোকন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, গোলাম রব্বানী পৌর আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক, বকশীগঞ্জের নজরুল ইসলাম সওদাগর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক, মেলান্দহের আশরাফ হোসেন লিচু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, মাসুদুর রহমান মাসুদ উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় পার্টি থেকে আসা আবু তাহের উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পেয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপি থেকে যোগ দিয়েছেন নেত্রকোনার পূর্বধলার অলি আহাম্মেদ, জাহাঙ্গীর আলম, আজিজ খাঁ, মোহাম্মদ রাজিব, মোহাম্মদ মহসিন, আবদুল বারেক, আবু সিদ্দিক তালুকদার, মোহাম্মদ শাহিন, আবদুল হেকিম, খোরশেদ আলম, এরশাদ মিয়া, মোহাম্মদ জালাল, এনায়েত কবীর, আবেদ আলী, নুরু মিয়া, নজরুল ইসলাম, বাবুল মিয়া, আবদুল বারেক, সিরাজ মিয়া, সবুজ মিয়া, হাবিবুর রহমান, কাছম আলী, সাইদুর রহমান তালুকদার, মোহাম্মদ রফিক, কলমাকান্দার আবু সাইদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজ, হাবিবুর রহমান, সুভাস সাহা, আস্রাব আলী মেম্বার, সুহাব মিয়া, মতি মিয়া, নুরু মিয়া, খালিয়াজুরীর জাহাঙ্গীর চৌধুরী, হায়দার জাহান চৌধুরী, আবুল কালাম, আবদুল কাইয়ুম, মোহনগঞ্জের নুরুল আমিন, কামরুন্নাহার বুলবুল, সাজ্জাদুল আলম শিবলী, রুহুল আমিন রাহুল, জামালপুর সদরের মোহাম্মদ সোহাশ, দেলোয়ার হোসেন, সরিষাবাড়ীর রফিকুল ইসলাম, আবদুল হাকিম, মেলান্দহের দিদার পাশা, রফিকুল ইসলাম মিল্লাত, আবদুর রহমান চাঁন, আমিন খান, মাদারগঞ্জের সাইদুর রহমান, মোহাম্মদ হেলাল, রাশেদুল ইসলাম, ইউসুফ আলী, আবদুল লতিফ তরফদার, মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, এহসান বারী, রবিউল ইসলাম খান, মাহমুদা বেগম মেরী, মুশফিকুর রহমান আজিম, আবদুল মমিন, সেলিম আহম্মেদ, আতোয়ার রহমান, সাইফুল ইসলাম, সিজার হাসান, মোহাম্মদ জনি, মোহাম্মদ রবিন, খাইরুল মুসল্লী, আবদুল জলিল, মোহাম্মদ নিপুন, মোহাম্মদ ফারুক, মোহাম্মদ মাল্লাম, খলিলুর রহমান, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ লিটন, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি, মোহাম্মদ আজাদ, মোহাম্মদ নাছির, আবদুল কাদের, নুর ইসলাম, হাফিজুর রহমান, মীর মামুন, মোহাম্মদ রাসেল, মোহাম্মদ বাবুল, রাজু সরকার, শফিকুল ইসলাম, মীর মামুন ও মোহাম্মদ নাইম। জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন জামালপুরের মেলান্দহের কিসমত পাশা ও আবু তাহের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *