ভারত থেকে রফতানি বন্ধের পর পেঁয়াজ আমদানির বিকল্প দেশ এখন মিয়ানমার। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজেই এখন পূরণ হচ্ছে চাহিদা। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন একটি অসাধু চক্র। তাদের কারসাজিতে ৪২ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়।

আমদানিকারক, আড়াতদার ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মিলে ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।

সোমবার (৪ নভেম্বর) তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমদানির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় আজ পঞ্চম দফায় আমরা খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করি। এসময় আমরা জানতে পারি, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ১২ থেকে ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট জড়িত। তারা মিয়ানমার থেকে কমদামে পেঁয়াজ আমদানি করে আড়তদারদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সিন্ডিকেটের একটি তালিকদা আমরা হাতে পেয়েছি। এখানে চট্টগ্রামের তিন জন আমদানিকারক রয়েছেন, বাকিরা সবাই কক্সবাজার এলাকার। তাদের তালিকা আমরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিকট পাঠিয়েছি। তারা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর নুপুর মার্কেট এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহরাব এন্টারপ্রাইজ, এ হোসাইন ব্রাদার্স, জেএস ট্রেডার্স, মেসার্স আল্লাহর দান স্টোর।

অন্যদিকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আলিফ এন্টারপ্রাইজ, শাকিল ট্রেডার্স, গ্লোবাল লজেস্টিক নেটওয়ার্ক, আমদানিকারক সজিব, জহির, সাদ্দাম এই সিন্ডিকেটে রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে বিক্রেতা ফোরকান, শফি, মিন্টু, খালেক, টিপু, আড়তদার মেসার্স আজমীর ভাণ্ডার, খাতুনগঞ্জ ট্রেডার্স, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান জেবি অ্যান্ড সন্সের মালিক আব্দুল খালেক।

সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সোহরাব এন্টারপ্রাইজ, এ হোসাইন ব্রাদার্স, জেএস ট্রেডার্স ও আলিফ এন্টারপ্রাইজের আমদানি করা পেঁয়াজের চারটি চালানের এলসির কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রবিবার (৩ নভেম্বর) সোহরাব এন্টারপ্রাইজ ১০৩ টন পেঁয়াজ আমদানি করে। এই চালানটি ৪৯ হাজার ৯০০ ডলার দিয়ে আমদানি করা হয়। যেখানে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪২ টাকা। অথচ এই পেঁয়াজ তারা পাইকারিতে প্রতিকেজি বিক্রি করেছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।

একই দিন এ হোসাইন ব্রাদার্স ৬২ টন, আলিফ এন্টারপ্রাইজ ১০২ টন এবং জেএস ট্রেডার্স ৬১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে। আমদানিতে এসব পেঁয়াজের দামও পড়েছে প্রতিকেজি ৪২ টাকা।

এ সর্ম্পকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন এই সিন্ডিকেটের তালিকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করেছেন। টেকনাফভিত্তিক এই সিন্ডিকেট ভাঙতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে অভিযান পরিচালনা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

তবে কারসাজির মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটে নাম আসা খাতুনগঞ্জের আড়তদার ফোরকান। তিনি বলেন, ‘আমি টেকনাফে থেকে কমিশনে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে আমাদের চাক্তাইয়ের আড়তে পাঠাই। পেঁয়াজের দাম বাড়ানো-কমানোর সঙ্গে আমার কোনও যোগসাজস নেই। আমরা তো কমিশনে বিক্রি করি। যারা মিয়ানমার থেকে আমাদানি করেন, তারাই এর জন্য দায়ী। তারা পেঁয়াজ এনে আমাদের কমিশনে বিক্রি করতে দেন। আমরা তাদের ঠিক করে দেওয়া দামে বিক্রি করি।’

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন টেকনাফের শাকিল ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের রফতানিকারকরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারের খবর রাখেন। বাংলাদেশে পেঁয়াজ কত বিক্রি হয়, তারা সেই খবর নিয়ে পেঁয়াজের স্টক কমিয়ে দেন। এরপর বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’

এ সর্ম্পকে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। প্রথম দিকে প্রতিকেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। এখন প্রতিকেজির আমদানি মূল্য ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।’

গত এক মাসে টেকনাফ হয়ে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারত রফতানি বন্ধ করার পর রবিবার পর্যন্ত মোট ২৫ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। প্রথম দিকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টন আমদানি করা হতো। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমদানিও বেড়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ ১৫৩৫ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *