যাত্রা শুরু হলো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিক্রেতাহীন সততা স্টোরের। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও ন্যায়পরায়ণ মনোভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্রেতাহীন এই দোকানের যাত্রা শুরু।

বুধবার নরসিংদী সদর উপজেলার আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ‘সততা স্টোর’ উদ্বোধন করেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ।

পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলা শহরের স্কুলে অন্ততপক্ষে দুটি করে সততা স্টোর চালু করা হবে বলে জানান দুদক কমিশনার।

উদ্বোধনকালে স্কুলমাঠে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।

দুদক কমিশনার বলেন, দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে দুদক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দুদক স্কুলগুলোতে সততা স্টোর নামে বিক্রেতাবিহীন দোকান চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে স্কুলপর্যায় থেকে শিশুদের সৎ শিক্ষা দেওয়া হবে।

নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, সততা স্টোরে সব ধরনের পণ্য থাকবে। শিক্ষার্থীরা নিজেরা পণ্য কিনবে। নিজেরাই নির্দিষ্ট বাক্সে মূল্য পরিশোধের অর্থ রাখবে। এর মাধ্যমে স্কুলপর্যায় থেকেই শিশুরা সততা ও ন্যায়পরায়ণতা শিখবে, যা ভবিষ্যতে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে কাজ করবে।

কথা হয় আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বায়েজিদের সঙ্গে। রাইজিংবিডিকে সে জানায়, আমাদের স্কুলে সততা স্টোর উদ্বোধন হওয়ায় ভালো লাগছে।

কী জন্য এই স্টোর- এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, আমাদের মধ্যে সৎ মনোভাব গড়ে তুলতে এই দোকান চালু করা হয়েছে। আমরা পণ্য কিনে বাক্সে টাকা রেখে যাব। কোনো বিক্রেতা থাকবে।

প্রাথমিকভাবে দেশের প্রতিটি জেলার একটি উপজেলায় একটি বালক ও একটি বালিকা বিদ্যালয়ে ওই স্টোর স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে দুদক। যেখানে কোনো রকম বিক্রেতা ছাড়াই দোকানে খাতা, কলম, পেন্সিল, ইরেজার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেন্সিল, চিপস, বিস্কুট ইত্যাদি পণ্য বিক্রি হবে। আর ক্রেতারা তালিকামূল্য দেখে পণ্য ক্রয় করে দোকানের নির্ধারিত বাক্সে টাকা রাখবেন। সব পণ্যের দাম হবে বাজারমূল্যের সমান।

স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সততাবোধ সৃষ্টিতে দুদক দোকানের নাম ‘সততা স্টোর’ রেখেছে। ইতিমধ্যে সততা স্টোর স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দুদক থেকে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে স্টোরের প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ করবে।

সততা স্টোরে পণ্য ক্রয়ের নিয়মাবলির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সততা স্টোরে প্রবেশের সময়ে রেজিস্টার খাতায় নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর লিখতে হবে। এরপর পণ্যের মূল্য তালিকা দেখে যেসব পণ্য ক্রয় করা হবে তার মূল্য সততা স্টোরে রক্ষিত ক্যালকুলেটরে হিসাব করে পরিশোধ করা হবে। ক্রেতা ছাত্রছাত্রীকে একটি কাগজে পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে পণ্যের দামসহ টেবিলে রাখা খামে ভরে নির্ধারিত ক্যাশবাক্সে ফেলতে হবে। যদি চাহিদামতো পণ্য না পাওয়া যায় তবে তা প্রি-অর্ডার বুকে লিখে অর্ডার দেওয়া যাবে।

সততা স্টোর পরিচালনার বিষয়ে নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও মহানগর/জেলা/উপজেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক কর্তৃক গঠিত কমিটি এ স্টোর পরিচালনা করা হবে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মনোনীত তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এ স্টোর পরিচালনা করবে।

সততা স্টোরটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের গঠিত বিশেষ মনিটরিং কমিটি মনিটর করবে। ওই মনিটরিং কমিটি প্রতিমাসে অন্তত একবার বৈঠক করে হিসাব-নিকাশ যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা করে প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর পরিচালনা কমিটির কাছে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *