• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ বেড়েই চলছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ

Reporter Name / ৫৪ Time View
Update : শনিবার, ৮ মে, ২০২১

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ২ লাখের কিছু বেশি। তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশই বেকার বা শ্রমবাজারের বাইরে। পঁচিশোর্ধ্ব বয়সীদের অর্ধেকেরই স্নাতক ডিগ্রিও নেই। দরিদ্র জীবন যাপন করছে এক-পঞ্চমাংশ। অন্যদিকে মার্কিন অর্থনীতিতেও মারাত্মক আঘাত হেনেছে মহামারী। দেশটিতে মহামারীর তীব্রতা কিছুটা কমলেও এখনো সংক্রমণ বা মৃত্যুর গতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি জীবনযাত্রাও। বিশেষ প্রণোদনা দিয়েও ভোক্তাব্যয় স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে পারছে না দেশটির সরকার। সব মিলিয়ে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের নিয়ে আশঙ্কার জায়গা অনেক। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্সপ্রবাহ ব্যাপকমাত্রায় বেড়েছে। এক বছর আগেও দেশে রেমিট্যান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। কিন্তু কভিড সংক্রমণের এক বছরে দেশটিকে হটিয়ে সে অবস্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৪৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত দুই অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৯ কোটি ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে ১৭১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। অন্যদিকে কভিড প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১৩৩ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় গত বছরের শুরুতে। পরিসংখ্যানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ মূলত ওই সময় থেকেই বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে। তারাও বলছেন, রেমিট্যান্সের এ বিশাল প্রবৃদ্ধি দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীদের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
তাদের ভাষ্যমতে, মহামারীর অভিঘাতে দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বড় একটি অংশ চাকরি হারিয়েছেন। আবার আয় সংকুচিত হয়েছে অনেকেরই। এর বিপরীতে ব্যয় বেড়েছে। আয়-ব্যয়ের এ বিপরীতমুখিতায় সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের বড় অংশ বিপদে পড়েছে। এ অবস্থায় মার্কিন সরকারের নগদ প্রণোদনার অর্থ তাদের জীবনযাপনে বড় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। কেউ কেউ সে প্রণোদনার অর্থের একাংশ পাঠিয়েছেন দেশে অবস্থানরত স্বজনদের। কিন্তু বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহের গতিতে যে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কোনো সামঞ্জস্য নেই।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য হলো, তিন-চার বছর আগের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা পাঠানো সহজ হয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে ব্যাংকে গিয়ে আমি খুব সহজেই পাঠাতে পেরেছিলাম। মহামারীতে দেশে স্বজনদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশী আমেরিকানরা আগের তুলনায় বেশি অর্থ পাঠাতে পারেন। তবে সেটি এত বেশি কীভাবে হলো তা খতিয়ে দেখা দরকার।

দেশের ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে লুট হওয়া অর্থের একটি অংশও রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে ফিরতে পারে বলে ধারণা সাবেক এ রাষ্ট্রদূতের। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয় বেড়ে গিয়েছে, এমন সংবাদ আমরা শুনিনি। বরং মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন, তারা শূন্য হাতেই ফিরেছেন। লকডাউনসহ নানা কারণে বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় ১০ মাসে ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসা অস্বাভাবিক। দেশের ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে লুট হওয়া অর্থের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলো। এখন সেসব লুটের টাকা রেমিট্যান্স হিসেবে হোয়াইট মানিতে রূপান্তর হয়ে থাকতে পারে।

অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশীদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শুরু হয় সত্তরের দশকের প্রারম্ভে। ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার। তবে গত দুই দশকে এ অভিবাসনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, ২০১৯ সাল শেষে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮ হাজার। তাদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছে ৫৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রায় অর্ধেকেরই বসবাস নিউইয়র্কে। এছাড়া ডেট্রয়েট, ওয়াশিংটন, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ফিলাডেলফিয়ায়ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীর বাস।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘বাংলাদেশিজ ইন দি ইউএস ফ্যাক্ট শিট’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মৌলিক সূচকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশী অভিবাসীরা। এমনকি এশিয়া অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশীদের অবস্থান বেশ পেছনে।

জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের যে সংজ্ঞা ধরা হয়, তাতে দেশটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের ১৯ শতাংশই দরিদ্র, যেখানে দেশটির দারিদ্র্যের হার ১৩ শতাংশ। এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে তাদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ। একটি বাংলাদেশী আমেরিকান পরিবারের বার্ষিক গড় আয় ৫৯ হাজার ৫০০ ডলার। যদিও সেখানকার এশীয় পরিবারগুলোর বার্ষিক গড় আয় ৮৫ হাজার ডলারের বেশি। অন্যদিকে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে কর্মসংস্থান রয়েছে ৫৯ শতাংশের। বাকি ৪১ শতাংশই হয় কর্মহীন, নয় শ্রমবাজারের বাইরে। এর বিপরীতে এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সার্বিক কর্মসংস্থানের হার ৬৪ শতাংশ।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে মাত্র ৫৫ শতাংশ ইংরেজিতে দক্ষ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়াদের মধ্যেও ১৩ শতাংশ ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। সেখানকার পঁচিশোর্ধ্ব প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ৫১ শতাংশেরই স্নাতক ডিগ্রিও নেই।

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয় বলে মনে করেন অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেন, চলমান মহামারীতে দেশে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছে। উদ্যোক্তাদের অনেকেই ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন বলে মনে হয়। তবে ব্যতিক্রম ঘটনাও থাকতে পারে। এটি সত্য যে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা সে সমাজের অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোতে অনেকেই পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এ কারণে দেশের সঙ্গে অনেক বাংলাদেশীর সম্পর্ক খুবই কম।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও করোনাকালে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যদিও এ দেশগুলো থেকে হঠাৎ করে রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোয় বাংলাদেশীরা পরিবারসহ স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে বাংলাদেশ থেকে নিজেদের বাড়িঘর বিক্রি করে ওই সব দেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স অনেক বেশি বেড়ে যায়, সেটি অস্বাভাবিক। এ উল্লম্ফন প্রকৃত প্রবৃদ্ধি কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। তবে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে ফিরে এলে আমাদের আপত্তি নেই। পাচারকৃত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে আবর্তন হলে সেটি মঙ্গলজনক। শর্ত হলো দেশে আসা অর্থ দেশে থাকতে হবে। এক দিক থেকে এসে অন্যদিক দিয়ে আবার চলে গেলে তাতে ক্ষতি ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহে বড় প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত মাসেও (এপ্রিল) প্রবাসীরা ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে এপ্রিলে রেমিট্যান্সপ্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ৩৯ শতাংশের বেশি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category


[cvct title=”COVID-19 Global Stats” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]

[cvct title=”Coronavirus Stats” country-code=”BD” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]



Fact News

Fact News theme is a complete magazine theme, excellent for news, magazines, publishing and review sites. Amazing, fast-loading modern magazines theme for personal or editorial use. You’ve literally never seen or used a magazine that looks or works like this before.

https://slotbet.online/