• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম

বাসায় ফেরেননি মামুনুল, সন্তানসহ ‘ঘর ছেড়েছেন’ স্ত্রী

Reporter Name / ১৪ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টের ঘটনাপ্রবাহের পর হেফাজত নেতা মামুনুল হক তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফেরেননি বলে জানিয়েছেন বাসার নিরাপত্তারক্ষী।

ফেসবুকে রিসোর্ট কাণ্ডের লাইভ শুরু হওয়ার পর সন্তানসহ সেই বাসা থেকে বের হয়ে যান তার চার সন্তানের জননী স্ত্রী। তারা বাসায় ফেরেননি এখনও।

মামুনুলের রিসোর্ট সঙ্গীনির খোঁজও মিলছে না। তিনি মোহাম্মদপুরের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন বলে বিষয়টির খোঁজ খবর রাখা নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য মিলেছে। তবে সেই নারীর অবস্থান এখন কোথায়, সেটি জানতে পারেননি তিনিও।

মোহাম্মদপুরে যে মাদ্রাসায় মামুনুল হক শিক্ষকতা করেন, সেখানে তিনি গেছেন বলে দাবি করেছেন তার দল খেলাফত মজলিসের এক নেতা। যদিও সেই মাদ্রাসার নিরাপত্তা রক্ষী বলেছেন উল্টো কথা।

মামুনুল ঢাকায় থাকেন মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এর এক নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে। সেটির নিরাপত্তা কর্মী ইকবাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামুনুল হক সাহেব ওই দিনের ঘটনার পর আর বাসায় আসেননি। উনি বাসায় নেই।’

তিনি এখন কোথায় আছেন- এমন প্রশ্নে ইকবাল বলেন, ‘আমি জানি না। আমি গার্ড আমি এত কিছু বলতে পারব না।’

শনিবার রিসোর্টে যাওয়ার দিন সকালে মামুনুল এই বাসা থেকে বের হন একা। ফেসবুকে রিসোর্টকাণ্ডের লাইভ শুরু হওয়ার পর তার ছেলেদেরকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান তার স্ত্রী।

রিসোর্ট কাণ্ডের পর স্ত্রী ও ছেলেরাও বাসায় ফেরেননি বলে জানান নিরাপত্তা রক্ষী ইকবাল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘তিন দিন হলো তারাও কেউ বাসায় নেই। কোথায় গিয়েছেন বলে যাননি।’

 

বাসায় ফেরেননি মামুনুল, সন্তানসহ ‘ঘর ছেড়েছেন’ স্ত্রী
মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এর এক নম্বর সড়কের একটি বাসায় থাকেন মামুনুল হক

 

শনিবার সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে হেফাজত নেতা দাবি করেন ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। যদিও তার দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা ঘটনায়।

সেই নারীর নাম, শ্বশুরবাড়ি, শ্বশুরের নাম সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে সেই নারীর দেয়া তথ্যের কোনো মিল নেই।

মামুনুল বলেছেন, তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আমেনা তইয়্যেবা। বাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম।

তবে সেই নারী জানিয়েছেন তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা, বাবার নাম অলিয়র, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখার পর সেই রাতে রিসোর্টে হামলা করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয় হেফাজতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। রাতেই তিনি ঢাকায় ফেরেন।

সারা দেশে তোলপাড়ের মধ্যে মামুনুল চার ভাইকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, সেই নারী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী। পারিবারিকভাবে তারা বিয়ে করেছেন।

দুই দিন পর মামুনুলের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায় হেফাজত নেতারা জরুরি বৈঠকের পর দাবি করেন, মামুনুল তার দ্বিতীয় বিয়ের যে কথা বলেছেন, সেটি ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বৈধ।

তবে এরই মধ্যে মামুনুলের একটি ভিডিও ছড়িয়েছে, যেখানে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে মহানবী (সা.) এর হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো মেয়ে বিয়ে করলে তার সেই বিয়ে বাতিল। এ বিষয়ে অবশ্য হেফাজত নেতারা কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

মামুনুলের সেই মাদ্রাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আল আমিন বলেন, ‘উনি গত কয়েক দিন মাদ্রাসায় আসেননি। এখন কোথায় আছেন আমি জানি না।’

ভেতরে দায়িত্বশীল কেউ আছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভেতরে মাস্টার্স (দাওরায়ে হাদিস) পরীক্ষা চলছে। প্রবেশ নিষেধ রয়েছে।’

মাওলানা মামুনুল হক সবশেষ কবে এসেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবশেষ কবে এসেছিলেন আমি বলতে পারব না।’

দল যা বলছে

হেফাজত নেতার রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না উনি কোথায় আছেন। আপনি আমাদের দলের আজিজুর রহমান হেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

এরপর আজিজুর রহমান যা বলেছেন সেটি জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসার নিরাপত্তারক্ষীর বক্তব্যের বিপরীত।

খেলাফত মজলিস নেতা বলেন. ‘উনি আজকে মিটিংয়ে ছিলেন। মিটিং মোহাম্মদপুরে রহমানিয়া মাদ্রাসায় হয়েছিল।’

নারায়ণগঞ্জ থেকে মামুনুল ফেরেন আলাদা

মামুনুল যে নারীকে নিয়ে সোরাগাঁওয়ের রিসোর্টে গিয়েছিলেন, হাঙ্গামার পর তাকে বাদ দিয়ে একা ঢাকায় ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ শাখার নেতা ফেরদাউসুর রহমান।

মামুনুলের ঘনিষ্ঠ মহানগর হেফাজতের এই সভাপতি বলেন, ‘রয়্যাল রিসোর্টে থেকে মামুনুল হক ঢাকার পল্টনে তার বোনের বাড়িতে গেছেন। আমি নিজে তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ থেকে একই গাড়িতে গিয়েছিলাম। এর পর তিনি সেখান থেকে মোহাম্মদপুর জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায় যান।’

 

বাসায় ফেরেননি মামুনুল, সন্তানসহ ‘ঘর ছেড়েছেন’ স্ত্রী
মোহাম্মদপুরের এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন মামুনুল হক

 

মামুনুল যাকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি ওই গাড়িতে ছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না তিনি আরেক গাড়িতে গেছেন।’

মামুনুলের বাসার দারোয়ান নাকচ করলেও নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের এই নেতার দাবি, মামুনুল ওই রাতে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় গিয়েছিলেন।

হেফাজত নেতা ও তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী এখন কোথায় আছেন জানতে চাইলে ফেরদাউস বলেন, ‘তাদের পারিবারিক ব্যাপার তো আমি জানি না। তবে তারা দুই জনই ঢাকায় আছেন। এক সঙ্গে আছেন কি না তা জানি না। আর জানলেও আপনাকে বলব না।’

‘পুলিশের হেফাজতে নেই’

গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ১০ দিনের মাথায় সোমবার রাতে মামুনুল ও তার বেশ কয়েকজন সঙ্গীর বিরুদ্ধে মামলা হয় পল্টন থানায়।

মামুনুলের খোঁজ না পাওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি নিশ্চিত করেন, হেফাজত নেতা তাদের হেফাজতে নেই।

হেফাজত নেতাকে সরকার ধরেছে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশি হেফাজতে নিলে, তাকে কীভাবে বাইরে দেখছেন? তিনি তো বাইরে দিব্যি ঘুরছেন তার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবাইকে নিয়ে।’

মামুনুলের বিয়ের দাবির সত্যতা প্রশ্নের মুখে যেসব কারণে

রিসোর্টের সঙ্গীর নাম, তার বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা নিয়ে দুই ধরনের তথ্যের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ফোনালাপ হেফাজত নেতার বিয়ের দাবির সত্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন।

পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন।

এরই মধ্যে মামুনুলের রিসোর্টের সঙ্গীনির বড় ছেলে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুলের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি তার মায়ের সঙ্গে বাবার সংসার ভাঙার জন্য মামুনুলকে দায়ী করেন।

এই কিশোর মামুনুলের বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশা করব এর যেন সঠিক বিচার হয়, আপনারা কারও অন্ধ ভক্ত হয়েন না।… এই লোকটা আলেম নামধারী একটা মুখোশধারী একটা জানোয়ার। এর মধ্যে কোনো মানুষত্ব নাই। সুযোগের সব সময় অপেক্ষায় থাকে, কাকে কীভাবে দুর্বল করা যায়। আমার আর কিছু বলার মতো ভাষা নাই।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category


[cvct title=”COVID-19 Global Stats” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]

[cvct title=”Coronavirus Stats” country-code=”BD” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]



Fact News

Fact News theme is a complete magazine theme, excellent for news, magazines, publishing and review sites. Amazing, fast-loading modern magazines theme for personal or editorial use. You’ve literally never seen or used a magazine that looks or works like this before.

https://slotbet.online/