• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

৫ টুকরো লাশের পাশে পাঁচ ঘণ্টা!

Reporter Name / ১১ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগের একটি বাড়ির ৪র্থ তলার ছোট্ট কক্ষ প্রায় ৫ বছর আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের স্টাফ সজিব হাসান ও শাহনাজ পারভীন। তবে আজ বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ আকস্মিক সজিবের বাসায় অভিযান চালানোর পর যে দৃশ্য দেখা যায় তাতে বাড়ির মালিক ও আশপাশের বাসিন্দারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।

৫০ বছর বয়সী এক নারী ৩২ বছর বয়সী যুবক প্রেমিকের লাশ ৫ টুকরো করে তার পাশে ভাবলেশহীনভাবে বসে রয়েছেন। পুরো ঘর রক্তাক্ত। ৪২ বছয় বয়সী শাহনাজকেই এতকাল সজিবের স্ত্রী হিসেবে জানতেন আশপাশের সবাই। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর বেরিয়ে এলো গোপনে সজিবের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শাহনাজ। এই সম্পর্কের জের ধরে সজিবের আরও কিছু অপকর্ম শাহনাজ জানতে পারেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান তারা। শেষ পর্যন্ত শাহনাজ একাই কেএম দাস লেনের ১৭/১ নম্বর বাসার ভেতর সজিবকে হত্যা করে লাশ নিয়ে বসে ছিলেন। পরে রক্তমাখা ছুরিসহ শাহনাজ পারভীনকে গ্রেপ্তার করে ওয়ারী থানায় নেওয়া হয়।

পুলিশ শাহনাজকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি সজিবকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, সজিব তার স্বামী নয়। তার স্বামী একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের সংসারে ২ মেয়ে। ১ মেয়ে স্কুলে নেওয়ার সময় প্রায় ৫ বছর আগে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফ সজিবের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। প্রথমে অল্পস্বল্প কথা হতো। এরপর প্রেমে জড়িয়ে তারা অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। তখনই সজিব শাহনাজকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বামীবাগে বাসা ভাড়া নেন। প্রায় প্রতিদিনই দিনের বেলায় সজিবের ভাড়া বাসায় এসে সময় কাটাতেন শাহনাজ। আর সন্ধ্যায় স্বামীর বাসায় ফিরতেন। বুটিকসের কাজ শেখার কথা বলে বাসা থেকে নিয়মিত বের হতেন শাহনাজ। তার স্বামী ও সজিবের বাসা ওয়ারীতে।

শাহনাজ পুলিশকে জানিয়েছেন, সজিব তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অন্যদের জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রায়ই টাকা আদায় করতেন। শাহনাজের মেয়ের ওপরও তার কুনজর পড়েছিল। আরও কয়েক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল সজিবের। এটা টের পান শাহনাজ। এর পরও সজিব যে কোনো সময় তাদের সম্পর্ক কাউকে জানিয়ে দিতে পারে- এই ভয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন শাহনাজ। আবার স্বামীর সঙ্গেও শাহনাজের সুসম্পর্ক ছিল না। স্বামী-স্ত্রী দু’জন প্রায়ই ঝগড়ায় জড়াতেন। পাঁচ বছর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রাখলেও শাহনাজের স্বামী তা টের পাননি।

জানা গেছে, গত সোমবার স্বামী ও দুই সন্তান রেখে শাহনাজ পারভীন সজিবের বাসায় গিয়ে ওঠেন। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। পুলিশও জিডির তদন্ত শুরু করে। প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য বিশ্নেষণ করে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে শাহনাজের অবস্থান সজিবের বাসায় বলে নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে সজিবকে হত্যার পর শাহনাজ তার স্বামী জসীমকেও ফোন করে জানান, খুব বিপদে আছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। জসীমও বিষয়টি পুলিশকে জানান।

আজ বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে ৫ টুকরো লাশের সামনে শাহনাজকে বসে থাকতে দেখেন। এরপর ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় লাশের ৫টি টুকরো। ২ হাত ও ২ পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে মাথাসহ পুরো দেহ উপুড় করে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়।

পুলিশ জানায়, শাহনাজ গৃহিণী। তার বাবার বাড়ি চাঁদপুরে। আর সজিব হাসানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ড থানার নারায়নকান্দা (বিশ্বাসপাড়া) গ্রামে। গ্রামে থাকা মা-বাবা ও পরিবারের কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না সজিবের। স্বজনরা জানতেন, ঢাকায় এক বয়স্ক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছেন সজীব।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার হানান্নুল ইসলাম জানান, অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড। স্বামীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর শাহনাজ সজিবের বাসায় উঠেন। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ার তথ্য ফরমে সজিবের স্ত্রীর নাম ‘মৌসুমী’ বলে উল্লেখ করা হয়। আসলে সে ভুয়া নাম ব্যবহার করেছে। এই নামে তার কোনো স্ত্রীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে লোকজন এতকাল জানতেন শাহনাজই তার স্ত্রী। চরম ক্ষোভ থেকেই হত্যার পর লাশ আবার ৫ টুকরো করেছিল সে। এটা এক ধরনের মানসিক বিকৃতির পরিচয়ও। শাহনাজের এক হাতেও একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হয়তো শাহনাজের আশঙ্কা ছিল সজিব তাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই ঝগড়ার সময় সে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কামরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ৩ দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে প্রেমিক সজিবের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য উঠেছিলেন শাহনাজ। তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সজিব আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আজ সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সজিব তাকে লাঠিপেটা করেন। এরপর সজিব ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে। সজিবের কাছ থেকে তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। এরপর ছুরি দিয়ে সজিবের দুই হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। সজিবকে একাই হত্যা করেছেন বলে দাবি করছেন শাহনাজ। সজিবের হাত পা আলাদা করার জন্য ছুরি ও শীল ব্যবহার করেছেন এই নারী।

ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাজ্জাদ রোমান বলেন, আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে শাহনাজের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে দিতে বলেছিলেন প্রেমিক সজিব। বাস কাউন্টারের কাজ ছেড়ে দিয়ে ওই টাকায় সজিব ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে রাজি হননি শাহনাজ। তাকে জানিয়ে দেন, স্বামীর সংসার ছেড়েছেন তার কারণে। গহনা বিক্রি করবেন না। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। শাহনাজের দাবি, সজিব তাকে ছুরি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে নিয়ে সজিবের পেটে আঘাত করেন। এরপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সজিবের কনুই থেকে দুই হাত ও হাঁটু থেকে দুই পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। লাশের টুকরোগুলো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। সেখানেই তার ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। – আরটিভি নিউজ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category


[cvct title=”COVID-19 Global Stats” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]

[cvct title=”Coronavirus Stats” country-code=”BD” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]



Fact News

Fact News theme is a complete magazine theme, excellent for news, magazines, publishing and review sites. Amazing, fast-loading modern magazines theme for personal or editorial use. You’ve literally never seen or used a magazine that looks or works like this before.

https://slotbet.online/